দিল্লির সম্ভ্রান্ত এক ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে গৌরী শিবারকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন ‘বলিউড বাদশাহ’ শাহরুখ খান। হিন্দু রীতিতেই গৌরীর গলায় মালা পরিয়েছিলেন কিং খান। দিনটি ছিল ১৯৯১ সালের ২৫ অক্টোবর। শাহরুখ-গৌরীর ভালোবাসার গল্প ছবির কাহিনিকেও যেন হার মানায়। শুরু থেকেই অনেক বাধা-বিপত্তি এসেছে তাঁদের প্রেমে। কিন্তু সব চড়াই-উতরাই পেছনে ফেলে ঠিকই একে অপরের জীবনসঙ্গী হয়েছেন সফল এ প্রেমিক যুগল। তাঁরা সুখী দাম্পত্য জীবন কাটাচ্ছেন। দুই ছেলে আরিয়ান, আবরাম ও মেয়ে সুহানাকে নিয়ে শাহরুখ-গৌরীর সুখের সংসার। মাঝে বলিউডের অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে ঘিরে শাহরুখের ঘনিষ্ঠতার খবর চাউর হওয়ায় শাহরুখ-গৌরীর সংসারে অশান্তির ঝড় উঠলেও, পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সমস্যা মিটিয়ে পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় করেছেন শাহরুখ-গৌরী। দীর্ঘদিন এক ছাদের নিচে বসবাস করে ভালোবাসা, পারস্পরিক সমঝোতা এবং বিশ্বস্ততার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সফল এ দম্পতি। ১৯৯১ সালে গাঁটছড়া বাঁধলেও শাহরুখ-গৌরীর পরিচয় পর্বটা হয়েছিল ১৯৮৪ সালে, যখন তাঁরা দুজনই স্কুলে পড়তেন। তখন শাহরুখের বয়স ছিল ১৯, আর গৌরীর মাত্র ১৪ বছর। একটি অনুষ্ঠানে তাঁদের প্রথম সাক্ষাত্ হয়। শাহরুখ জানিয়েছেন, প্রথম দেখাতেই গৌরীর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানে এক বন্ধুর মাধ্যমে গৌরীকে পটানোর চেষ্টা করেন শাহরুখ। ওই বন্ধু গৌরীকে জানান, তাঁর সঙ্গে নাচতে চান শাহরুখ। কিন্তু একবাক্যে না করে দেন গৌরী। গৌরী জানান, তিনি তাঁর প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করছেন। পরে শাহরুখ আবিষ্কার করেন, গৌরী মিথ্যাচার করেছেন। তিনি আসলে তাঁর ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তখন শাহরুখ এগিয়ে গিয়ে গৌরীকে বলেন, ‘আমিও তোমার ভাই হতে চাই।’ এভাবেই শুরু হয় শাহরুখ-গৌরীর প্রেম উপাখ্যান।
শাহরুখের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ালেও পরিবারের সদস্যদের তা জানাতে সাহস পাননি গৌরী। কারণ তাঁর বাবা ছিলেন ধর্মপ্রাণ ব্রাহ্মণ। শাহরুখ-গৌরী চুপিসারে দেখা সাক্ষাত্ করলেও, সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতেন। বিশেষ করে গৌরীর ভাই তাঁদের একসঙ্গে দেখে ফেললে সবাইকে বলে দেবে—এই ভয়ে তটস্থ থাকতেন শাহরুখ-গৌরী দুজনই। একবার গৌরীর বাসায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হাজির হন শাহরুখ। গৌরীর বাবা-মায়ের সঙ্গে ভাব জমাতে নিজেকে হিন্দু বলে পরিচয় দেন তিনি। এভাবে দীর্ঘ পাঁচ বছর লুকিয়ে প্রেম করেছেন শাহরুখ-গৌরী।
গৌরীকে নিয়ে অনেক বেশি আধিপত্যপ্রবণ ছিলেন শাহরুখ। এমনকি চুল খোলা অবস্থায় গৌরীকে দেখলে ভীষণ চটে যেতেন তিনি। এসব কারণে ছোটখাটো নানা বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। কয়েক বছর প্রেমের পর গৌরী সিদ্ধান্ত নেন তিনি শাহরুখকে ছেড়ে চলে যাবেন। তাঁকে না জানিয়েই কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মুম্বাই চলে যান গৌরী। এটা জানার পর শাহরুখ তাঁর মাকে গৌরী সম্পর্কে সবকিছু খুলে বলেন। তখন শাহরুখের মা তাঁকে দশ হাজার রুপি দিয়ে হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকাকে খুঁজে আনতে বলেন।
মায়ের কথামতো গৌরীকে খুঁজতে মুম্বাই যান শাহরুখ। তিনি খুব ভালো করেই জানতেন, সমুদ্রসৈকত দারুণ পছন্দ গৌরীর। এজন্য তিনি বিভিন্ন সমুদ্রসৈকতে প্রেমিকাকে খুঁজতে শুরু করেন। একদিন আকসা সমুদ্রসৈকতে ঠিকই তিনি গৌরীর সন্ধান পেয়ে যান। সামনাসামনি হতেই তাঁরা দুজনই কাঁদতে শুরু করেন। সেই মুহূর্তে গৌরী উপলব্ধি করেন, শাহরুখ তাঁকে কতটা ভালোবাসেন! মূলত তখনই আজীবনের সঙ্গী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন এই প্রেমিক যুগল।
একপর্যায়ে সাহস করে বাবা-মাকে শাহরুখের বিষয়ে খুলে বলেন গৌরী। কিন্তু শাহরুখের সঙ্গে গৌরীর বিয়ে নিয়ে আপত্তি তোলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। অবশেষে কয়েক বছর পর শাহরুখের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে রাজি হন গৌরীর বাবা-মা। ১৯৯১ সালের ২৫ অক্টোবর হিন্দু রীতি অনুযায়ী শাহরুখের সঙ্গে বিয়ে হয় গৌরীর।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গৌরীকে উদ্দেশ করে শাহরুখ বলে ওঠেন, ‘চলো, নামাজের সময় হয়েছে।’ শাহরুখের মুখে এই কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত গৌরীর পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবরা। তখন হাসতে হাসতে শাহরুখ বলেন, ‘আমি স্রেফ মজা করার জন্যই এটা বলেছি।’
গৌরীকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন বলেই জানিয়েছেন শাহরুখ। এ প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, ‘আমি গৌরীকে অনেক ভালোবাসি। কারণ সে খুবই সত্। তাঁর জন্যই আমি পূর্ণতা পেয়েছি। তাঁর কাছে অনেক কিছু শিখেছি আমি। আমার করণীয় সম্পর্কে সে আমাকে নানা পরামর্শ দেয়। পৃথিবীতে গৌরীই আমাকে সবচেয়ে বেশি জানে ও বোঝে।’