নিছক এক ভালোবাসার গল্প

| প্রকাশিত হয়েছেঃ February 29, 2012 | টিউন বিভাগঃ
৭ মার্চ ২০১০, হুম মনে আছে ঠিক এই দিনটিতেই অভ্র প্রথম বুঝতে পারে ফারিহা কে ভালোবেসে ফেলেছে সে। কিন্তু অভ্র সেদিনও জানত না আজও জানে না সেই বুঝতে পারাটা তার জন্য কি নিয়ে আসছে।
ফারিহা-অভ্র, ভিন্ন মেরুর দুই বাসিন্দা। কলেজে যখন প্রথম যেদিন কথা হয় সেদিন ফারিহার হাতে কড়া একটা ঝাড়ি খেয়েছিল অভ্র, কারণটা মনে পড়ে না অভ্র’র। তবে ঝাড়ি দিয়েই যে তাদের বন্ধুত্বের শুরু এটা সত্যি। এরপর আবার কোন একদিন কিছু নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি, ফারিহার সরি বলা, আবার ভুল বোঝাবুঝি আবার কারও একজনের সরি বলা এভাবেই হঠাত করে কিভাবে যেন তারা খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেল! ফেসবুকে অজস্র ঝগড়া করার মিনি ম্যাসেজ, সাহিত্য ম্যাসেজে দুইজনেরই ইনবক্স ভরে যাওয়ার কথা। ঠিক এর মাঝেই ৭ মার্চটা জানি কিভাবে চলে এল। অভ্র’র জীবনে সবচেয়ে প্রিয় কিংবা অপ্রিয় দিন ! যেদিন সে বুঝতে পারে এই কাঠখোট্টা, সব সময় তার বিপরীত কথা বলা মেয়েটাকে সে ভালোবাসে। কিন্তু অভ্র আর ফারিহা যে ভালো বন্ধু আর কিছুই না, তাহলে এখন? অভ্র এই করে, সেই করে বোঝাতে চায় ! পাগলামি করে, বোকামি করে, ফারিহা ভুল বোঝে , ঝগড়া হয় আবার সরি বলে ঠিক পথে আনা কত কি ? কিন্তু ২৫ ডিসেম্বর ২০১০ ছিল অভ্র’র জন্য খুব বাজে একটা দিন।
২৫ ডিসেম্বর,২০১০
-রাহাত তোর ফোনটা দে তো ?
-কি করবি ফোন দিয়ে?
-আরে দে না!
-অভ্র আর যাই কর, মোবাইলে কিন্তু টাকা বেশি নাই।
-আচ্ছা দে, আগে।
এরপর অভ্র, রাহাতের মোবাইল থেকে ফারিহাকে ম্যাসেজ পাঠালো।
ম্যাসেজে লিখা ছিল, “অভ্র রোড অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে!”
অভ্রর কাছে নিতান্ত একটা ফান করার বিষয় ছিল এটা, সে একই ম্যাসেজ আরও কয়েকজনকে পাঠিয়েছিল, তার কিছু কাছে বন্ধুদের কিন্তু ফারিহাকে পাঠানোটা যে তার কত বড় ভুল ছিল তা সে আজও বোঝে না। ঐদিনের পর থেকে ফারিহা অভ্র’র সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। অভ্র’র অবস্থাটা তখন কেউ দেখেনি, আমি বুঝতে পারতাম। খুব কাছ থেকে দেখেছি তো! ঘুমের ঔষধ খাওয়াটা তখন থেকেই শুরু করে ও। একটা জলজ্যান্ত ছেলে হঠাত করেই কেমন যেন হয়ে যায়, একটাই কথা এতটুকু কাজের জন্য এত বড় শাস্তি !
অভ্র আবার জীবনে ফিরে এসেছিল! ওর জীবনের বাঁকগুলো ও নিজেই বুঝতে পারে না। কত বড় বড় বিপদ ওকে পাড়ি দিয়ে চলে গেছে মনে হয় সেটাও ও বুঝতে পারে নি। বোকা ছেলেটা !
৭ মার্চ, ২০১২
-অভ্র যেতেই হবে, গিয়ে কিন্তু কোন লাভ নাই।
-নাহ দোস্ত ! একবার ওর সামনা সামনি দাঁড়িয়ে কথা বলতে চাই। আমার ধারনা ও বুঝবে। হাজার হোক আমার সবচেয়ে ভালো ফ্রেন্ড ও। শিওর থাক বুঝবে।
অভ্র’র জন্মদিন ছিল ৮ মার্চ। ওর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনবরনও সেদিন কিন্তু সে ৭ তারিখ রাতে রওনা দেয় রাজশাহী। কত বড় বোকা ছিল ছেলেটা, ভেবেছিল জন্মদিনের দিন তো ফারিহা আর তাকে না করতে পারবে না, রাগ করে থাকতে পারবে না। আর অভ্র চেয়েছিল ১০ মিনিট সময়, শুধু ওর সাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু অভ্র ভুল ছিল। ও যতটা আশা করেছিল না, তার চেয়েও অনেক বেশি কষ্ট নিয়ে ফিরে ঐদিন ও রাজশাহী থেকে। অজানা অচেনা এক শহরের রাস্তায় সারাটা দিন একা একা ঘুরেছে, রাগ করে না খেয়ে থেকেছে কিন্তু কথা বলার সুযোগ তাকে দেয় নি ফারিহা। অভ্র চলে এসেছিল এর পরে।
১ নভেম্বর,২০১২
অভ্র নামের ছেলেটা মারা গেল আজ। যেই ছেলেটা একটা নতুন রঙের স্বপ্ন দেখত। যেই ছেলেটা ফারিহাকে ভালোবাসত, আসলে ভালোবাসত না, ফারিহা ওর জন্য সব কিছু হয়ে গিয়েছিল আর তাইতো ঐ ফারিহার জন্য সব কিছু ছেড়ে দিয়েছিল সে। আজ সে মারা গেল। সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে অভ্র প্রথম একটা সত্য মেনে নিয়েছিল আর তা হল, “ফারিহা ওকে কোন দিন ভালোবাসে নি, ভালোবাসেও না।”
নাহ, অভ্র আসলে মরে নি। অভ্র বেঁচেই আছে কিন্তু আমার কাছে তা মৃত অভ্র’র চেয়ে বেশি কিছু না। কারণ অভ্রই বলত, “আমার একটা মহান বাণী আছে Man dies when his dreams die ”
আজ অভ্রর সব স্বপ্নকে অভ্র গলা চিপে মেরে ফেলেছে, তাহলে অভ্র বেঁচে থাকে কিভাবে!
অভ্র, ২ নভেম্বর, ২০১২।
লেখাটা শেষ করে উঠে চলে গেল অভ্র।

Previous
Next Post »
Design by MS Design

Powered by Blogger