বিগ ব্যাং থেকে বর্তমান মানব সভ্যতা এক নজরে

| প্রকাশিত হয়েছেঃ April 29, 2015 | টিউন বিভাগঃ
‘বিগ ব্যাং’, মহাবিশ্বের সূচনা, মহাবিশ্বের সব কিছুর উৎপত্তি। সকল পদার্থ ও শক্তির সৃষ্টি।
আজ থেকে প্রায় ১৪০০ কোটি বছর আগে পরমানুর চেয়েও বহুগুন ক্ষুদ্র প্রায় শুন্য আয়তনে ঘটা একটি বিস্ফোরনের মধ্য দিয়ে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি।
‘বিগ ব্যাং’ এর পর সময়ের পরিক্রমায় ধাপে ধাপে এই মহাবিশ্ব বর্তমান অবস্থায় আসে। গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যলাক্সি সব কিছুর শুরু ‘বিগ ব্যাং’।
সল্প পরিসরে দেখা যাক ‘বিগ ব্যাং’ এর পর কি কি ধাপ পার হয়ে আমাদের পৃথিবী, পৃথিবীতে ‘প্রথম প্রান’ এবং প্রানের বিকাশের ধারায় বর্তমান মানব সভ্যতা।
প্রথম পর্বে ‘বিগ ব্যাং’ এর পর পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর সৃষ্টি এবং পৃথিবীতে ‘প্রথম প্রান’ সৃষ্টির উপযুক্ত পরিবেশ গঠিত হবার সময় পর্যন্ত একটি ধারাবাহিকতা তুলে ধরা হল।
  • বর্তমান সময় হতে প্রায় ১৪০০ কোটি বছর আগে বৃহৎ বিস্ফোরন সংগঠন। তাপমাত্রা প্রায় ১০^২৭ ডিগ্রী সেঃ।
  • বিগ ব্যাং এর পর ১ সেকেন্ড সময়ের মাঝে প্রায় শূন্য আয়তনের মহাবিশ্ব ছড়িয়ে পরে গ্যালাক্সির চেয়েও বড় এলাকায়। পদার্থ-প্রতিপদার্থ, কোয়ার্ক-প্রতিকোয়ার্ক একে অপরকে ধ্বংস করে শুধু শক্তি হয়ে বিরাজ করে। বাকিরা প্রোটন ও নিউট্রন সৃষ্টি করে। তাপমাত্রা কমে প্রায় ১০^১২ডিগ্রী সেঃ।
  • ইলেক্ট্রন পজিট্রন কে ধ্বংস করে। তাপমাত্রা আরো কমে প্রায় ৩০০ কোটি ডিগ্রী সেঃ হয় দশ সেকেন্ডের মধ্যে।
  • পরমানু গঠনের তিন মৌলিক কনা ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন প্রস্তুত হতে সময় নেয় বিগ ব্যং এর পর তিন মিনিট।
    এর পর এভাবে সময় বয়ে চলে। মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হতে থাকে। মহাশুন্যে ভেসে বেড়ায় ইলেক্ট্রন, প্রোটন আর নিউট্রনের দল বিচ্ছিন্ন ভাবে।
  • প্রোটনকে কেন্দ্র করে প্রথম ইলেক্ট্রন ঘুর্নন শুরু করে বিগ ব্যাং এর প্রায় ৩ লক্ষ বছর পর। তৈরী হয় মহাবিশ্বের প্রথম পরমানু, হাইড্রোজেন পরমানু। এভাবে তৈরী হয় অসংখ্য বিচ্ছিন্ন হাইড্রোজেন পরমানু। যা বর্তমান কালের সকল বস্তুর, সকল পরমানুর আদি অবস্থা।
  • এ সময় থেকেই শুরু হয় মহাবিশ্ব গঠনে মহাকর্ষের প্রধান ভূমিকা। হাইড্রোজেন পরমানু মহাবিশ্বের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে মহাকর্ষের প্রভাবে কাছাকাছি আসা শুরু করে। গঠিত হয় গ্যালাক্সি। বিগ ব্যাং এর পর প্রায় ৩০ কোটি বছর থেকে ৫০ কোটি বছর পর্যন্ত চলতে থাকে বিভিন্ন স্থানে গ্যালাক্সির জন্ম ও পূর্নতা প্রাপ্তির পথে এগিয়ে যাবার সূচনা।
    এসব গ্যালক্সির অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে কাছাকাছি থাকা হাইড্রোজেন মহাকর্ষের প্রভাবে আরো কাছাকাছি এসে একটি কেন্দ্রের দিকে এগুতে শুরু করে। তাদের পারষ্পারিক ঘর্ষনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেই সাথে বাড়তে থাকে চাপ এবং বাড়ে সামগ্রিক মহাকর্ষ বল যা আশেপাশের হাইড্রোজেনকে আকর্ষন করে কাছ নিয়ে আসে আরো বেশি পরিমানে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ১ কোটি ৮০ লক্ষ ডিগ্রী ফারেনহাইট হলে হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস মিলে গঠিত হতে থাকে ভারী মৌল হিলিয়াম। সেই সাথে ফিউশনের জন্য বিকিরিত হয় শক্তি। এভাবেই তৈরী হয় মহাবিশ্বের প্রথম নক্ষত্র। একই প্রক্রিয়ায় তৈরী হয় মহাবিশ্বের সকল নক্ষত্র। আমাদের সৌরজগতের সূর্যও এমনই একটি নক্ষত্র।
    এখানে তৈরী হল প্রাথমিক ও হাল্কা দুটি মৌল হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। কিন্তু আমাদের পৃথিবীতেই আছে আরো শতাধিক তুলনামূলক ভারী মৌল। সেগুলোও তৈরী হয় নক্ষত্রেই। নক্ষত্রের আকারের উপর নির্ভর করে তুলনামুলক ভারী নক্ষত্র গুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে আর সেই সাথে সকল হাইড্রোজেন ফিউশনিত হয় হিলিয়াম হবার পরেও ফিউশন প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ভারী থেকে অতি-ভারী নক্ষত্রে একই ফিউশন প্রক্রিয়ায় তৈরী হয় হিলিয়াম থেকে যথাক্রমে, কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ম্যাগনেসিয়াম এবং সবশেষে লোহা। নক্ষত্রের সকল পরমানু লোহাতে পরিনত হবার পর আর ফিউশন চলতে পারে না। তখন মৃত্যু ঘটে একটি নক্ষত্রের। ছোট নক্ষত্রে এই মৃত্যু শান্ত হলেও মাঝারী ও বৃহদাকার নক্ষত্রে তারাদের ফিউশন শেষে এরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় বিশাল এক বিস্ফোরনের মধ্য দিয়ে। আর এই বিস্ফোরনের মাধ্যমেই তৈরী হয় কপার, সীসা এবং ইউরেনিয়ামের মত ভারী মৌল।
  • আজ থেকে প্রায় ১০০০ কোটি বছর পূর্বে সৃষ্টি হয় মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি। যার অধিবাসী আমরা। এই গ্যালাক্সিতে বারবার নক্ষত্রের জন্ম, মৃত্যু ও বিস্ফোরনের মাধ্যমে সৃষ্ট ভারী মৌল ও প্রয়োজনীয় হাল্কা হাইড্রোজেন একত্রীত হয় এই সর্পিলাকার গ্যালাক্সির পরিধির কাছাকাছি বর্তমান সৌরজগতের স্থানে।
  • বর্তমান সময় থেকে প্রায় ৪৫৬ কোটি বছর আগে এই একত্রীত ধুলোর মেঘ তার কেন্দ্রে তৈরী করে একটি নতুন নক্ষত্র। যাকে আমরা বলছি ‘সূর্য’। সৌরজগতের প্রান কেন্দ্র।
  • এই সৌরজগতের মোট পদার্থের ৯৯.৯% পদার্থ নিয়েই গঠিত হয় সূর্য। তারপরেও তার আশেপাশে থাকে গ্রহ উপগ্রহ তৈরীর জন্য পর্যাপ্ত পদার্থ। যেগুলো সময়ের সাথে মহাকর্ষের টানে কাছাকাছি এসে একত্রীত হয়ে গ্রহের আকার ধারন করে সূর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকে এবং তৈরী করে সৌরজগত। এই গ্রহগুলোর একটি আমাদের পৃথিবী।
  • আজ থেকে ৪৫৪ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবী গ্রহের আকার ধারন করে যার ভর ছিল বর্তমান ভরের ৮০% । এ অবস্থায় পৃথিবী ছিল সম্পূর্ন অর্ধ-তরল গলিত লাভার একটি গোলাকার খন্ড। তখন পৃথিবীর ঘুর্নন ছিল বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি। তখন পৃথিবীর নিজ অক্ষের উপর একবার ঘুরতে সময় লাগত মাত্র ৬ ঘন্টা।
    দিন অতিবাহিত হতে থাকল পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথ নির্ধারন করে নিল। গলিত পৃথিবী ঠান্ডা হতে থাকল। হালকা পদার্থ তরলের উপরে উঠে এসে ভূপৃষ্ঠের আবরনের তৈরী করতে থাকল আর ভারী পদার্থ ডুবে গিয়ে পৃথিবীর কেন্দ্রে ভারী লোহা ও নিকেলের মিশ্রিত একটি ‘কোর’ তৈরী করল। এই ধাতব কেন্দ্র থেকে একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হল যা সূর্য থেকে ধেয়ে আশা আয়নিত কনা থেকে পৃথিবীর জীবজগৎকে এখনো রক্ষা করে চলে প্রতিনিয়ত। তখনো পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ তৈরী হয়নি।
  • ৪৫৩ কোটি বছর পূর্বে প্রায় মঙ্গল গ্রহের সমান একটি বস্তুখন্ড ঘন্টায় প্রায় ২৫০০০ কিঃমিঃ বেগে এসে পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে। এই সংঘর্ষের ফলে আগন্তুকের কিছু অংশ পৃথিবীতে থেকে যায় আর বাকি অংশ ছড়িয়ে পরে মহাকাশে। ছড়িয়ে পরা এই বস্তুর কিছু অংশ মহাকর্ষের টানে একত্রীত হয়ে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে শুরু করে। সৃষ্টি হয় পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ।
    চাঁদ সৃষ্টি হওয়া পৃথিবীর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। এই সংঘর্ষের ফলেই পৃথিবীর উলম্ব অক্ষ খানিকটা বেকে যায়। যার ফলে আজ আমরা পাচ্ছি ঋতুবৈচিত্র। যেটি প্রানের উদ্ভব ও জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজনীয়। পৃথিবীর আহ্নিক গতি হ্রাস প্রাপ্ত হয়ে ৬ ঘন্টা থেকে ২৪ ঘন্টায় আসতে চাঁদের আকর্ষনের গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া বর্তমানেও পৃথিবীর জলবায়ুর উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে চাঁদ। তার চাক্ষুস উদাহরন জোয়ার-ভাটা।

  • ৪৫০ কোটি বছর পূর্ব থেকে ৩৮০ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত পৃথিবী প্রানের উদ্ভব ঘটার জন্য পর্যাপ্ত স্থিতিশীল অবস্থায় আসে। পৃথিবীর কক্ষপথ সুনির্দিষ্ট হয়, পৃথিবীর আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি স্থিতিশীল হয়, পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের গতি নির্দিষ্ট হারে এসে পৌছায়, চাঁদ অর্ধ-তরল লাভা থেকে ঠান্ডা হয়ে কঠিন অবস্থায় আসে।
  • ৪৫০ কোটি বছর পূর্বে, পৃথিবী কিছুটা শীতল হয়ে ভূপৃষ্ঠ কঠিন আকার ধারন করে। তবে তখনো ভূপৃষ্ঠে চলছে প্রচন্ড অগ্নুৎপাত। সেসময় পৃথিবীতে তাপমাত্রা এতই বেশি ছিল যে কোন তরল পানি ছিল না, ছিল ‘সুপারহিটেড স্টীম’।
    ধীরে ধীরে পৃথিবী ঠান্ডা হতে থাকে, জলীয়বাস্পের দরুন বৃষ্টিপাত হয়। প্রথমে খুবই অল্প পরিমানে ও পরে বেশি। ভুপৃষ্ঠ পানি তরল অবস্থায় থাকার মত তাপমাত্রায় আসে। বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্টি হয় জলাধার এবং সমূদ্র।
  • আজ থেকে ৩৮০ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীতে সৃষ্টি হয় প্রথমবারের মত স্থায়ী সমুদ্র, যা ছিল প্রথম প্রানের উৎপত্তিস্থল ও আবাস।
প্রথম পর্বে মহাবিশ্বের উৎপত্তি থেকে পৃথিবীতে প্রান সঞ্চারের উপযুক্ত পরিবেশ গঠন পর্যন্ত সময়কে ক্ষুদ্র পরিসরে তুলে ধরা হল।
পরবর্তী দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে পৃথিবীতে প্রথম প্রানের উদ্ভব, ক্রমবিকাশ ও বিবর্তনের ধারায় বর্তমান মানব সভ্যতা গঠন পর্যন্ত অতিক্রান্ত সময়ের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ন অংশ থাকবে।
তথ্যসূত্রঃ-
১. মহাকাশে কী ঘটছে – আবদুল্লাহ আল-মুতী
২. http://www.history.com
সবাইকে ধন্যবাদ।
ব্লগে পূর্বে প্রকাশিত :- Techtune

Previous
Next Post »
Design by MS Design

Powered by Blogger