কয়েকজন সফল ফ্রিল্যান্সারদের কথা

| প্রকাশিত হয়েছেঃ November 23, 2015 | টিউন বিভাগঃ
সফল ফ্রিল্যান্সারদের থেকে আসলেই অনেক কিছু শেখার আছে তাই আজকে অাপনাদের নিকট তুলে ধরছি কিছু সফল ফ্রিল্যান্সারদের উপদেশবানী।

পরিবারের সহায়তা লাগবে
মো. কামরুজ্জামান:- ব্যক্তিগত বিভাগে বিজয়ী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পড়াশোনা শেষে আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন মো. কামরুজ্জামান। কয়েক বছর পর ব্যবসা ছেড়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা থেকেই যুক্ত হয়ে পড়েন ফ্রিল্যান্সিংয়ে। ২০১১ সাল থেকে শুরু। এখনো কাজ করছেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটের জন্য। এ ছাড়া সার্ভার ও পিবিএক্স নিয়েও কাজ করেন। নটর ডেম কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষে বুয়েটে ভর্তি হন। তিনি মনে করেন, সফল ফ্রিল্যান্সার হতে গেলে পরিবারের সহায়তা লাগবে। নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান করতে চান, যেখানে নতুন ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করতে পারেন। পাশাপাশি মনে করেন, নতুনদের শেখানোর জন্য ওয়েবে, ইউটিউবে ভালো টিউটোরিয়াল থাকা জরুরি।

শেখাতে চাই নতুনদের
মো. জেনসিন আবেদীন:- (কুড়িগ্রাম) মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জেনসিন আবেদীনের বাবা ২০০০ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান। দুই ভাই এবং এক বোনের পড়াশোনা, মাসহ পরিবারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়ছিল। তবে কষ্টের সে সময়েও এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে পরিচিত একজনের পেন্টিয়াম থ্রি কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ পান এবং ছবি সম্পাদনার কাজ শুরু করেন। ২০১২ সাল থেকে এ কাজ দিয়েই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন জেনসিন। ইতিমধ্যে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। স্বপ্ন দেখছেন পিছিয়ে থাকা জেলা কুড়িগ্রামে কিছু করার। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে অন্যদের শেখাতে চান। তিনি বলেন, ‘নিজে নিজে কিছু শেখার চেষ্টা না করলে কেউ সাহায্য করতে পারবে না। তাই নিজের আগ্রহ থাকা এবং কাজ শেখাটা জরুরি।’

সঠিক নির্দেশনা জরুরি
মো. সানোয়ার হায়দার:-(ঠাকুরগাঁও) চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় মো. সানোয়ার হায়দার ২০১৩ সালের শেষ দিক থেকে শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। শুরুর দিকে একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করতেন। ২০১৪ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি আউটসোর্সিংয়ের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে নিজের একটি ছোট প্রতিষ্ঠানে ১০ জনের একটি দল নিয়ে কাজ করছেন সানোয়ার। জানালেন, ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল ব্যতিক্রম কিছু করার। তাই ফিল্যান্সিংকে পেশা বেছে নিয়েছি। সানোয়ার বলেন, ‘পারিবারিক কিছু সমস্যার কারণে স্নাতক তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পেরেছি। এরপর আর পারিনি। সবকিছু গুছিয়ে আবার পড়াশোনা শুরুর ইচ্ছা আছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে সঠিক নিদের্শনা জরুরি।’ সেটি ধরে রেখে নিজের প্রতিষ্ঠানকে আরও বড় করার স্বপ্নে কাজ করছেন তিনি।

রয়েছে সম্ভাবনা
খালিদ মাহমুদ:- ব্যক্তিগত বিভাগে বিজয়ী ২০০৯ থেকে শুরু হয় খালিদ মাহমুদের ফ্রিল্যান্সিং পেশা। প্রথমে কাজটা শুরু করেছিলেন লেখালেখি করে। পরবর্তী সময় নিজের ওয়েবসাইটেই বিভিন্ন লেখা (কনটেন্ট) লিখতে শুরু করেন। সাইপ্রাসের ইউরোপিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভ্রমণ ও পর্যটন বিষয়ে পড়াশোনা করে আউটসোর্সিংয়ে পুরো মনোযোগ দিয়েছেন। খালিদ বলেন, ‘এখন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কনটেন্ট তৈরির কাজ করছি। ইংরেজি ভালো জানেন এমন যে কেউ এ কাজে যুক্ত হতে পারেন। কনটেন্ট লেখার বড় বাজার রয়েছে।’ খালিদ স্বপ্ন দেখেন নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। যেখানে খুঁজে খুঁজে দেশের বেকারদের এক জায়গায় এনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবেন।

লেগে থাকতে হবে
আরিফুল ইসলাম:-(কক্সবাজার) শুরুটা করেছিলেন ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানে। দুই বছর পর চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজেই কিছু করার চিন্তা থেকেই শুরু হয় ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ। এখন নিজ জেলা কক্সবাজারেই ওয়েবসাইট তৈরির কাজ করছেন আরিফুল ইসলাম। শুরুতে অনেক দিন ধরেই কাজের জন্য চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেননি। তবে লেগে ছিলেন। বলেন, ‘প্রথমে অনেকগুলো কাজে চেষ্টা করেও না পেয়ে আশাহত হইনি। নিজের কিছু করতে হবে, এমন চেষ্টায় লেগে থাকার ফলে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যাই।’ বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেসের থিম এবং প্লাগ-ইন তৈরি করেন আরিফুল ইসলাম। তাঁর পড়াশোনা কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে। ভ্রমণ করা আর সিনেমা দেখা তাঁর শখ। সময় পেলেই সমুদ্র দেখতে চলে যান। ভবিষ্যতে একটি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান করতে চান।

৪০ জনকে বিনা মূল্যে শিখিয়েছি
সৈয়দ মাহমুদ হাসান:-(নড়াইল) বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে সৈয়দ মাহমুদ হাসানের ওপর। শুরু হয় জীবনযুদ্ধ। বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে আউটসোর্সিংয়ের কাজ শেখা শুরু করেন তখন। শুরুতে ইন্টারনেট বিপণনের কাজ শুরু করলেও পরে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও), সার্চ ইঞ্জিন বিপণন (এসইএম) নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। এভাবেই শুরুটা। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় হাসান। খুলনা বিএল কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি নেন তিনি। ২০১১ সালে যুক্ত হন ফ্রিল্যান্সিংয়ে। বর্তমানে নড়াইল আইটি নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন হাসান। নড়াইলের দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের ফ্রিল্যান্সিং শেখান তিনি। হাসান বললেন, ‘এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে ৪০ জনকে বিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের নানা কাজ শিখিয়েছি।

মা–বাবাই অনুপ্রেরণা
সাক্ষর দাস:-(বরিশাল) সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে অনলাইনে গ্রাফিক এবং ওয়েব ডিজাইনের কাজ করছেন সাক্ষর দাস। প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা করে কাজ করেন। সাক্ষরের বাবা পিনাকী রঞ্জন দাস ব্যবসায়ী এবং মা জয়া রানী দাস গৃহিণী। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক সাক্ষর ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিংয়ের কাজ শুরু করেন মা-বাবার উৎসাহেই। তিনি বলেন, ‘কম্পিউটার প্রোগ্রামার এক আত্মীয়ের অনুপ্রেরণায় নিজেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে তৈরির কাজে লেগে যাই। আর সে কাজের স্বীকৃতি পেলাম এবার।’ সাক্ষর এখন স্বপ্ন দেখছেন, নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে, যেখানে বিনা খরচে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজগুলো শেখানো হবে। তাঁর বিশ্বাস, এভাবেই এগিয়ে যেতে পারে দেশ।

গুগলই বিশ্বস্ত শিক্ষক
মো. তৌহিদুজ্জামান:-(পাবনা) তৌহিদুজ্জামান ২০০৮ সাল থেকে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় কাজ শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় বন্ধুদের কাছে জানতে পারেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথা। পরবর্তী সময়ে পুরো এক বছর গুগলের সহায়তায় ধৈর্য ধরে লেগে ছিলেন। তাই বিশ্বাস করেন, অনলাইনে যাঁরা কাজ করতে চান, তাঁদের জন্য গুগল সবচেয়ে বড় গুরু, বিশ্বস্ত শিক্ষক। তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘অনলাইনে নানান ধরনের কাজ থাকলেও নিজে সফল হয়েছি অ্যাফেলিয়েট মার্কেটিং ও অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে। শুরুর দিকে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টাও কাজ করেছি প্রতিদিন।’ এখন নিজের একটা দল নিয়ে কাজ করেন তিনি। পড়ালেখার শেষ পর্যায়ে এসে আউটসোর্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হন তৌহিদুজ্জামান। এখন তিনি ভিডিও কনটেন্ট নিয়ে কাজ করছেন।

চেষ্টা থাকতে হবে
হিরো বড়ুয়া:-(চট্টগ্রাম)
২০১২ সালে ব্যক্তিগতভাবে ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শুরু করেন হিরো বড়ুয়া। পরবর্তী সময়ে কাজ করেন ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে এবং এ কাজটিই করে যাচ্ছেন। কম্পিউটার ও কম্পিউটারের কাজের প্রতি আগ্রহ থেকেই এ কাজে যুক্ত হয়ে পড়েন তিনি। বর্তমানে ওয়েব ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট এবং ই-কমার্স সমাধানের কাজ করেন হিরো বড়ুয়া। আউটসোর্সিংয়ের কাজে প্রতিদিন দিতে হয় ছয় থেকে সাত ঘণ্টা। স্নাতকোত্তর করেছেন ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে চট্টগ্রামের ইউএসটিসি থেকে। ‘নিজের চেষ্টায় একটি আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান তৈরির স্বপ্ন দেখি।’ বললেন হিরো বড়ুয়া। যে বিষয়ে পড়ছেন, সেই বিষয়ের জ্ঞান ও তথ্য আগ্রহী ব্যক্তিদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান হিরো। সফল হতে হলে চেষ্টা থাকতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

Previous
Next Post »
Design by MS Design

Powered by Blogger