কোমল পানীয় খান, মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান!

কোমল পানীয় বা soft drinks হলো মাদক বিহীন তরল। বেশিরভাগ কোমল পানীয়তেই কার্বন সমৃদ্ধ পানি, মিষ্টিজাতীয় পদার্থসহ সুগন্ধযুক্ত পদার্থের উপাদান, ক্যাফেইন থাকে। আমরা অহরহ এটি খেয়ে থাকি তাই এর যে ক্ষতিকর দিক রয়েছে তা নিয়ে আমরা কেউ ভাবি বলে মনে হয় না।

একটি ৩৫৫মি.লি এর কোকের ক্যানে প্রায় ১০চা চামচের মত চিনি থাকে। এই অতিরিক্ত চিনি দেহের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে। অতিরিক্ত চিনি দেহে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে দেহে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায় যা সবার জন্যই ক্ষতিকর বিশেষত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তো বটেই।
এছাড়া অতিরিক্ত চিনি ফ্যাট হিসেবে দেহে সঞ্চিত হয়, ফলে দেহের ওজন বেড়ে যায়। পশ্চিমা দেশসমুহে মুটিয়ে যাবার হার বেড়ে যাবার অন্যতম কারণ এই কোমল পানীয়। আর এই অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এর অন্যতম কারণ হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত চিনি দাঁতের গর্তজনিত ক্ষয় করে থাকে। দাঁতের এনামেল হলুদ করতেও ভুমিকা রয়েছে এই কোমল পানীয়ের।
প্রাত্যহিক কোমল পানীয় পান করার ফলে আমাদের ৩০% ওজন বেড়ে যাবার ঝুঁকি রয়েছে। পরীক্ষায় জানা যায় যে কৃত্রিম চিনি আমাদের মস্তিষ্ককে ভাবতে সাহায্য করে যে এটা মিষ্টি। তাই অতিরিক্ত শর্করার প্রতি আমাদের মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয় এবং মস্তিষ্কের বোঝা বেড়ে যায়।
কোমল পানীয়তে ব্যবহৃত কার্বন, ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ক্যালসিয়াম আমাদের হাড়ের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তাই দীর্ঘদিন ধরে ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ কম থাকলে হাড় ক্ষয় হয়ে যায় যাকে বলা হয় অস্টিওপোরেসিস। অন্যদিকে ক্যাফেইন শরীরের ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ কমায়, সাথে সাথে আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুকে উত্তেজিত করে ফলে মানসিক উত্তেজনা বেড়ে যায়, নিদ্রাহীনতার সমস্যা দেখা যায়।
কোমল পানীয়তে সোডিয়াম বেনজয়েট পদার্থের অস্তিত্ত রয়েছে। শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ আবিস্কার করেছন সোডিয়াম বেনজয়েট ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত এবং কর্মক্ষমতা হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সফট ড্রিংকস দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ক্যারামেলের রং আনার জন্যে সফট ড্রিংকসে পলি-ইথিলিন গ্লাইকোল নামে যে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, তা ক্যান্সার সৃষ্টির জন্যে দায়ী।
মজার ব্যাপার হলো, ডায়েট কোলা নামে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে যে সফট ড্রিংকস বিক্রি হয় তাতে চিনির পরিবর্তে এসপার্টেম নামে একটি কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। দেহের ওপর এ উপাদানটির রয়েছে ৯২ ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব। তার মধ্যে অন্যতম ব্রেন টিউমার, বন্ধ্যত্ব, ডায়াবেটিস, মৃগী এবং মানসিক ভারসাম্যহীনতা।
সফট ড্রিংকস যাতে বরফের মতো জমে না যায় সে জন্যে এতে ইথিলিন গ্লাইকোল নামের একটি উপাদান ব্যবহার করা হয়। এটি প্রায় আর্সেনিকের মতোই একটি বিষ। কিডনির ওপর এর প্রভাব খুবই ক্ষতিকর।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যারা সফট ড্রিংকস খান না বা পরিমিত খান, তাদের তুলনায় যারা প্রচুর পরিমাণে খান তাদের কিডনিতে পাথর জমার হার প্রায় তিনগুণ। সফট ড্রিংকসে যে স্যাকারিন ব্যবহার করা হয়, তাতে ইউরিনারি ব্লাডার ক্যান্সার অর্থাৎ মূত্রাশয়ের ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
প্রচলিত আরেকটি বিশ্বাস হল কোমল পানীয় হজমে সাহায্য করে। আমরা অনেকেই রিচফুড খাওয়ার পর সফট ড্রিংকস খেতে চাই এ ধারণায় যে, এতে খাবার দ্রুত হজম হবে। আমাদের দেহ সাধারণত ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খাবার হজম করে থাকে।
কিন্তু সফট ড্রিংকস যখন পরিবেশন করা হয়, তখন এর তাপমাত্রা থাকে ৩/৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কাজেই খাবার গ্রহণের পর যখন ঠান্ডা কোমল পানীয় পান করা হয়, তখন হজমে তো সাহায্য করেই না, উল্টো পচন ধরায়।
তাছাড়া এসিডিক হওয়ার কারণে সফট ড্রিংকস পাকস্থলীর সংবেদনশীল এলক্যালাইন ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে। ফলে পেটে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, বদহজম, গ্যাস, টক ঢেঁকুর ইত্যাদি নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।
সত্যি বলতে গেলে কোমল পানীয় আমাদের জীবনের অত্যাবশ্যকীয় জিনিস হয়ে গেছে। একে একেবারে বর্জন করা সোজা কথা নয়। তার পরেও নিজেদের কথা ভেবেই কোমল পানীয়কে যতটুকু সম্ভব দূরে রাখা উচিৎ।

Comments

Popular posts from this blog

উদ্যোক্তাদের জন্য ৫টি উপদেশ ৫টি প্রতিষ্টান প্রধানের পক্ষ থেকে

স্মার্টফোনের অতি ব্যবহার কিশোরদের অমনোযোগী করে

সবার চোখের আড়াল হতে আপনার ফেসবুক একাউন্ট হাইড করুন