গ্রামীণফোনের স্মার্ট প্রতারণা

| প্রকাশিত হয়েছেঃ July 27, 2013 | টিউন বিভাগঃ
বন্ধুরা, আজ আমি আপনাদের সাথে গ্রামীণফোণের একটি অভিনব প্রতারণা এবং আমার ধরা খাওয়ার গল্প শেয়ার করব--- অয়ন রহমান
টিভিতে গ্রামীণফোণের ১০০০ টি আকর্ষণীয় স্মার্টফোন জিতে নেবার লোভনীয় বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে গত মে মাসে আমি তাদের ক্যাম্পেইনে অংশ গ্রহণ করি। ক্যাম্পেইনের শর্ত
ছিল এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে ১০০ টাকা বা তার বেশি টাকার লোকাল ভয়েস কল করলে সর্বোচ্চ ব্যবহারের ভিত্তিতে ১০০০ জন ব্যবহারকারী পাবে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ফোর, গ্যালাক্সি এস থ্রি, গ্যালাক্সি নোট টু, সনি এক্সপেরিয়া জেড ও নোকিয়া লুমিয়া ৯২০ ও সিম্ফনি সহ ১০০০ টি আকর্ষণীয় স্মার্টফোন। এর পাশাপাশি প্রতিদিনের সর্বোচ্চ ৩ জন ব্যবহারকারী (লোকাল ভয়েসকল) পাবে ৩ টি করে গ্যালাক্সি এস ফোর। প্রতিদিনের বিজয়ীদের ক্ষেত্রে একবারের বিজয়ী দ্বিতীয়বারের জন্যে বিবেচিত হবে না। তবে ক্যাম্পেইন শেষে সর্বোচ্চ ব্যাবহারের ভিত্তিতে ১০০০ টি স্মার্টফোন জেতার সুযোগ তার জন্যেও প্রযোজ্য থাকবে। সঙ্গে ছিল ১০০ টি জিপি-জিপি ফ্রি এসএমএস। এই, একদিনের সর্বোচ্চ ৩ জন ব্যবহারকারীর একজন হবার লক্ষ্যে একদিন (২৪ ঘন্টা) আমি অবিরাম কথা বলে প্রায় ৩ হাজার টাকার লোকাল ভয়েজ কল ব্যবহার করি। যদিও গ্রামীণফোনে একসাথে ১০ টি নাম্বারে কন্ফারেন্সে কথা বলা যায়। সেক্ষেত্রে তিন হাজারের স্থলে ত্রিশ হাজার টাকার কথা বলাও সম্ভব। কিন্তু সেক্ষেত্রে এতগুলো সেটের চার্জ ধরে রাখা এবং অবিরত কল ধরে রাখা খুবই মুশকিল। কারণ গ্রামীণফোনের কল প্রতি এক ঘন্টা অন্তর অন্তর একাই কেটে যায়। এই লস টাইমের কথা এবং বিরাট অংকের টাকা হিসেব করলে পুরো বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে যায়। তাই ধরে নেয়া ষাট-সত্তর হাজার টাকার একটা স্মার্টফোনের জন্যে কেই এত টাকার রিক্স নেবে না। আর যাদের পক্ষে এত টাকা খরচ করা সম্ভব তারা সরাসরি মার্কেটে গিয়ে সেট কিনে আনবে, গ্রামীণের আশায় বসে থাকবে না।
যেহেতু প্রতিদিনের বিজয়ীদের ক্ষেত্রে একবারের বিজয়ী দ্বিতীয়বারের জন্যে বিবেচিত হবে না তাই আমি পরের দিন উক্ত দিনের বিজয়ীদের নাম জানতে গ্রামীণফোনের কাষ্টমার ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলি। তার সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। এরপর আমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে (অনলাইন চ্যাটিং, ফোন কল এবং স্ব-শরীরে কাষ্টমার সার্ভিস সেন্টারে উপস্থিত হয়ে) গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে তারা কেউই তাদের এই ক্যাম্পেইনটি সম্পর্কে কোনো তথ্যই জানেন না। কেউ বলেন প্রতিদিন একজন বিজয়ী, কেউ বলেন তিনজন কেউ বলেন একজনও না। আরবার কেউ বলেন বিজয়ীদের মোবাইলে এসএমএস করে রেজাল্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে। পরক্ষণেই আবার আরেকজন বলেন ফলাফল জানানো হয়নি। কেউ বলেন পুরস্কার দেয়া হবে বড় একটি অনুষ্ঠান করে, কেউ বলেন হেড অফিস থেকে কেউ বলেন কাষ্টমার সার্ভিস সেন্টার থেকে। কেউ বলেন পুরষ্কার দেয়া হয়ে গেছে। আবার কেউ বলেন পুরস্কার এখনো দেয়া হয়নি।
আমাকে জানানো হল যে, যেহেতু আমি কোনো এসএমএস পাইনি তাই আমি পুরস্কার জিততে পারিনি। যারা পুরস্কার জিতেছে তাদের প্রত্যেকের মোবাইলে এসএমএস করে ফলাফল জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপর আমি প্রতিদিনই তাদের কাষ্টমার সার্ভিস ১২১ এ কথা বলার সিদ্ধান্ত নেই কবে কোথায় কখন পুরস্কার দেয়ো হচ্ছে এটা জানার জন্যে। আমি তাদের কাষ্টমার সার্ভিন সেন্টারগুলোতে নিজে গিয়েও খোঁজ-খবর রাখছি কাউকে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে কিনা সেটা দেখার জন্যে। সর্বশেষ ২১ জুলাই পর্যন্ত কাউকেই পুরস্কার দেয়া হয়নি বলে আমাকে নিশ্চিত করেছে মতিঝিল কাষ্টমার সেন্টারের একজন ম্যানেজার।
পুরো ঘটনা থেকে আমি অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, প্রকৃতপক্ষে দামী এই স্মার্টফোনগুলি গ্রামীণফোন কাউকেই দেয়নি এবং দেবেও না। আমার মতো যারাই যোগাযোগ করেছে, তাদের সবাইকে একটি কথাই বলে দেয়া হয়েছে যে আপনি পুরস্কার জিতেন নি। কারণ, তাদের এই একটি কথা ছাড়া আর একটি কথাও কারোর সঙ্গে কারোর মিল আমি খুঁজে পাই নি।

ConversionConversion EmoticonEmoticon

:)
:(
=(
^_^
:D
=D
=)D
|o|
@@,
;)
:-bd
:-d
:p
:ng
:lv
Design by MS Design

Powered by Blogger