এই পুরস্কার পেয়ে খুশি তো বটেই। সেই খুশির কথা জানিয়ে সাকিব আল হাসান রসিকতাও করলেন, ‘বিয়ে না করে ফেললে পাঠকদের ভোটে সেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কারটাও আমিই পেতাম!’
আবারও বর্ষসেরা হওয়ার সুসংবাদ পাওয়ার আনন্দ অবশ্য কিছুটা হলেও ফিকে হয়ে গেছে এর আগের দিনই প্রথম আলোর ফাটানো বোমাতে। ওয়েবসাইটে গত ৩১ মের প্রথম আলো খুলেই হতভম্ব হয়ে বসেছিলেন কিছুক্ষণ। বাংলাদেশের ক্রিকেটের এভাবে ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যাওয়ার খবরে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সেটিই ভেবে পাচ্ছিলেন না। গত পরশু রাতে (সাকিবের ওখানে তখন সকাল) টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে সাকিব বললেন, ‘এখানে তো বাংলাদেশের সব চ্যানেলই দেখা যায়। সে সব দেখে ও পত্রিকা পড়ে সব জেনেছি। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম বলে কী প্রতিক্রিয়া জানাব, বুঝতে পারছি না। তা ছাড়া এত দূরে বসে দেশের পরিস্থিতিটাও ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে এটুকু বুঝতে পারছি, বিসিবি ও বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন ভীষণ চাপে আছে।’ মোহাম্মদ আশরাফুলের ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি সাকিবকে একটু হকচকিতই করে দিয়েছে, ‘শুধু আশরাফুল ভাই কেন, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এসবে জড়িত বলে অনুমান করতে পারিনি। এসবে উনি কেন জড়িয়ে গেলেন, আমি তা জানিও না। তা ছাড়া যা জানলাম, যদি ২০০৪ সালে এর শুরু হয়ে থাকে, আমি তো তখন অনেক ছোট। আন্ডার ফিফটিন বা আন্ডার সেভেনটিন খেলি।’
ফিক্সিং নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কালো অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে বিপিএলের সূত্র ধরে। ২০১৩ বিপিএলে যে দলকে নিয়ে এত বিতর্ক, সাকিব ছিলেন সেই ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের ইচ্ছা করে ম্যাচ হেরে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে এত তোলপাড়, সাকিব কি এর কিছুই আঁচ করতে পারেননি? এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলেই সাকিবের দাবি। ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে চিটাগং কিংসের বিপক্ষে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের যে ম্যাচ খুলে দিয়েছে ‘প্যান্ডোরার বাক্স’, চোটের কারণে সেটিতে খেলেনওনি। তবে ওই ম্যাচ নিয়ে নানা প্রশ্ন তিনিও শুনেছেন, ‘ম্যাচের পর সবাই ও ধরনের কথা বলেছে। অন্য টিমের খেলোয়াড়রা বলেছে, “কিরে, ম্যাচ ছেড়ে দিলি?” অত বড় নো বল (যেটি করেছিলেন মাহবুবুল আলম), ঢাকার স্লো ব্যাটিং...এসব নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে।’ তবে আসলে কী হয়েছিল, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন সাকিব, ‘আমি ওই ম্যাচে সব সময় ডাগআউটেও ছিলাম না। ড্রেসিংরুমে নিজের চোট নিয়ে নিজের কাজ করছিলাম। নিজে যেহেতু খেলিনি, তাই উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন ছিল না, থাকলে কতটা কঠিন এসব বলা মুশকিল।’
শুধু তো ওই একটি ম্যাচ নয়, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের কমপক্ষে আরও দুটি ম্যাচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) দুর্নীতি দমন বিভাগের (আকসু) আতশি কাচের নিচে। সে দুটিতে তো খেলেছেন সাকিব। মাঠে, ড্রেসিংরুমে বা টিম মিটিংয়ে সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েনি তাঁর? সাকিব নিরাপদ পথে হাঁটতে চাইলেন, ‘আমি যেহেতু ক্যাপ্টেনসি করি নাই, সেভাবে মিটিংয়ে থাকতাম না। তা ছাড়া তখন মাত্র বিয়ে করেছি। টিমের হোটেলেও বেশি থাকি নাই। পত্রিকায় পড়েছি, রফিক ভাই নাকি বলেছেন, সানোয়ার ভাইয়ের রুমে ম্যাচ হারা নিয়ে কথা হয়েছিল। ও সবও আমি জানি না।’
সত্যিই যদি কিছু না-ও জেনে থাকেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকাকে সুদূর মার্কিন মুলুকেও এসব প্রশ্ন ঠিকই তাড়া করছে। সেখানে তা-ও শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদেরই যা কিছু কৌতূহল। আগামী ২৩ জুন কাউন্টি ক্রিকেটে লিস্টারশায়ারের পক্ষে খেলতে সস্ত্রীক ইংল্যান্ডে যাওয়ার পর নিশ্চয়ই কৌতূহলীদের পরিধিটা আরও অনেক বাড়বে। এটা ভেবে কি একটুও বিব্রত বোধ করছেন না সাকিব? প্রশ্নটা শুনে সাকিব শুধু হাসলেন। বোঝা গেল, সেখানেও প্রসঙ্গটা এড়িয়েই যাবেন। বাকি সবার মতো তিনিও যে এখন আকসুর তদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায়।
ConversionConversion EmoticonEmoticon