যে চিঠি পৌঁছেনি রহিমার হাতে

| প্রকাশিত হয়েছেঃ June 07, 2013 | টিউন বিভাগঃ
সৌদি আরব থেকে রহিমা বেগমের জন্য চিঠি পাঠিয়েছেন তাঁর স্বামী। চিঠি বলতে খামের ভেতরে এক লাখ তিন হাজার টাকার একটি চেক। দিন যায় তবু চিঠি আসে না। শেষমেশ রহিমা বেগম ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানলেন, চিঠি বাংলাদেশে এসেছে বটে, তবে আরেকজন চেক ভাঙিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে গেছে।

অভিনব এ প্রতারণার শিকার রহিমার গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রাওনাট এলাকায়। তিনি বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, রাজধানীর বিমানবন্দরের চিঠি বাছাইকেন্দ্রের (এয়ার অ্যান্ড সর্টিং ডিভিশন) অসাধু কেউ এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
রহিমা বলেন, অগ্রণী ব্যাংকের কাপাসিয়া শাখায় তাঁর স্বামী হাদিউল ইসলামের হিসাব নম্বর আছে। চেকবই ছিল বাংলাদেশে। সম্প্রতি পারিবারিক একটি কাজে টাকার প্রয়োজন পড়ে। তাই হাদিউলের স্বাক্ষরের জন্য বাংলাদেশ থেকে একটি চেক পাঠানো হয়। হাদিউল নিজের নাম ও এক লাখ তিন হাজার টাকা লিখে স্বাক্ষর করেন এবং গত ১১ মে খামের ভেতরে চেকটি ভরে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে তা পাঠিয়ে দেন। খামের ওপরে ছিল রহিমার নাম ও ঠিকানা। কিন্তু বেশ কয়েক দিন হয়ে গেলেও চিঠি না আসায় তিনি অগ্রণী ব্যাংকের কাপাসিয়া শাখায় যান। ব্যাংকের কর্মকর্তারা তাঁকে জানান, গত ১৬ মে এনামুল নামের এক লোক চেক ভাঙিয়ে টাকা তুলে নিয়ে গেছে।
হাদিউল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ওই চেকের একটি ফটোকপি ব্যাংকের ঠিকানায় ও মূলটি স্ত্রীর ঠিকানায় পাঠান। ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বলেছিলেন, কেউ মূল চেক নিয়ে এলে তা ফটোকপির সঙ্গে মিলিয়ে টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু শুধু ফটোকপিটিই যথাস্থানে পৌঁছেছে। হাদিউল বলেন, ‘জমানো টাকা দিয়ে একটা জমি কিনতে চাইছিলাম। এ গরিবের টাকাই চোখে পড়ল।’
রাজধানীর জিপিও মোড়ে অবস্থিত ডাক বিভাগে গিয়ে কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, গত ১৪ মে সকাল ১০টার দিকে বিমানবন্দরের এয়ার অ্যান্ড সর্টিং বিভাগের কর্মকর্তারা এ চিঠি গ্রহণ করেছিলেন। এরপর আর কোনো তথ্য নেই। টাকা উত্তোলনকারী এনামুলের বিস্তারিত পরিচয় সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিমানবন্দরের এয়ার অ্যান্ড সর্টিং বিভাগ হচ্ছে ডাক বিভাগের একটি শাখা। ডাকযোগে বিদেশ থেকে আসা যেকোনো কিছুই ওই বিভাগে আসে। সেখান থেকে ঠিকানা অনুযায়ী ডাক বিভাগ এবং এর বিভিন্ন শাখায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
অগ্রণী ব্যাংকের কাপাসিয়া শাখার ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনা সত্য। চেক নিয়ে এলে তা স্বাক্ষরসহ কয়েকটি বিষয় যাচাই-বাছাই করেই টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। চেকের পেছনে শুধু উত্তোলনকারীর নাম নেওয়া হয়।’
বিমানবন্দরের সর্টিং বিভাগের সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল শরীফ লতিফ বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত চলছে।’
ডাক বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সব জায়গার মতো ডাক বিভাগ এবং এর শাখা-প্রশাখায় কিছু অসাধু কর্মচারী থাকতে পারেন। বহু আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও হাল আমলে ছিল না। অনেক দিন পর আবার ঘটল। যা হোক, দায়ী ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করে যথাযথ ব্যক্তিকে ফেরত দেওয়া হবে এবং দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
তবে ওই কর্মকর্তা বলেন, বিদেশ থেকে মূল্যবান কিছু পাঠাতে হলে ডাক বিভাগকে জানিয়েই (বিমা করে) তা পাঠানো উচিত। কিন্তু খরচের কারণে অনেকেই তা করেন না। নিরাপত্তার জন্য বিমা করে মূল্যবান কোনো কিছু পাঠালে প্রতারিত হলেও দ্রুত ফেরত পাওয়ার সুযোগ থাকে।

Previous
Next Post »
Design by MS Design

Powered by Blogger