রেশমার নতুন জীবন শুরু

নতুন জীবন শুরু হয়েছে বিস্ময়কন্যা রেশমার। এখন তিনি পাঁচতারকা হোটেল ওয়েস্টিনের পাবলিক এরিয়া অ্যাম্বাসেডর। সাভারের সমিঞ্চলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি ওই
হোটেলে যোগ দেন।
সাভারের রানা প্লাজাধসের ৩৯১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর, ১৭তম দিনে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে রেশমাকে উদ্ধার করা হয়। তিনি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার আনসার আলীর মেয়ে। গত ২ এপ্রিল তিনি রানা প্লাজার একটি পোশাক কারখানায় কাজে যোগ দেন।
রেশমাকে উদ্ধারের পর সাভার সমিঞ্চলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২৭ দিন মেডিকেল বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। হোটেল ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষ রেশমাকে চাকরি দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়। তাঁকে ওই হোটেলে হাউসকিপিং বিভাগের পাবলিক এরিয়া অ্যাম্বাসেডর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল এ উপলক্ষে সাভার সেনানিবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রেশমা তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘১৭ দিন ধ্বংসস্তূপের ভেতরে ছিলাম। আমি কল্পনাও করতে পারিনি জীবিত উদ্ধার হব। উদ্ধারের পর সিএমএইচে চিকিৎসা নিয়ে আমি এখন পূর্ণ সুস্থ। আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাসহ সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’
সাভার সেনানিবাসের নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, ‘শত চেষ্টা করেও শাহীনাকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সে বিষয়টি আমাদের হূদয়ে দাগ কাটে। তবে ঘটনার ১৭তম দিনে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে বিস্ময়কন্যা রেশমাকে জীবিত উদ্ধার করায় সেই ক্ষত অনেকটাই মিশে যায়।’ তিনি জানান, রেশমাকে চাকরি দেওয়ার জন্য হোটেল সোনারগাঁও ও ওয়েস্টিন থেকে দুটি প্রস্তাব আসে। রেশমা হোটেল ওয়েস্টিনে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
ওয়েস্টিনে যোগদানের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে রেশমা বলেন, ‘ওয়েস্টিন সম্পর্কে সব জানার পর আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে। এ কারণেই আমি ওয়েস্টিনে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ রেশমা বলেন, ‘যোগদানের পর প্রশিক্ষণ নিলেই বুঝতে পারব আমাকে কী করতে হবে। আশা করি আমাকে বুঝিয়ে দিলে আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে পারব।’
ধ্বংসস্তূপের ভেতরে আটকে থাকার অনুভূতি জানতে চাইলে রেশমা বলেন, ‘সে সময়ের কথা মনে পড়লে আমি ভয় পাই। আমার খারাপ লাগে। আমি শুধু ভাবি ছিলাম কই, আসলাম কই আর যাচ্ছি কই।’
রেশমাকে নিতে এসে হোটেল ওয়েস্টিনের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আজিম শাহ বলেন, ‘রেশমার পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা গর্বিত। তিনি অন্য কর্মীর মতোই সব সুবিধা পাবেন।’ সেনানিবাসে আনুষ্ঠানিকতার পর ওয়েস্টিনের জিএম রেশমাকে হোটেলে নিয়ে যান। সেখানে গতকাল বিকেলেই তিনি যোগদান করেন। এর আগে হোটেলের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়। এ সময় ওয়েস্টিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহামঞ্চদ নূর আলী বলেন, ‘রেশমা আমাদের কী দিতে পারবেন সেটা বড় কথা নয়, আমরা রেশমা এবং দেশকে কী দিতে পারলাম সেটাই বড় কথা।